লিভিং রুম ডিজাইন কিভাবে করবেন – সঠিক মাপ,লাইটিং এবং খরচ এর বিস্তারিত।

একটু সাজানো গোছানো ঘর কে না পছন্দ করে? আর কোন বাসায় গেলে প্রথমেই যে রুমটি চোখে পড়বে তা হলো আপনার লিভিং রুম। এই লিভিং রুম ডিজাইন ই হতে পারে আপনার রুচিশীলতার পরিচায়ক। পারিবারিক কোন অনুষ্ঠান, গেট টুগেদার বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা, একটি সুন্দর সাজানো গোছানো লিভিং রুম এই সবকিছুকে করে তুলতে পারে প্রাণবন্ত। তা হলে চলুন, লিভিং রুম ডিজাইন এর খুঁটিনাটি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

কিভাবে সাজাবেন আপনার লিভিং রুম? – How to Decorate Your Living Room?

আপনার বসার ঘরটি সাজাতে গেলেই প্রথম যে প্রশ্নটি মাথায় আসে, তা হলো, কিভাবে সাজাবো? কিভাবে সাজালে তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং আপনার নিজের রুচির সাথেও মিলবে অথবা প্রিয় সাজানো বারান্দা কিংবা বেডরুমের সাথে মানানসই হবে কিনা এসব নিয়ে দোটানায় পড়ে যান অনেকেই।

এবার আসুন, দেখে নেই ৩ টা বেসিক জিনিস যেগুলো খেয়াল রাখলে আপনি আপনার লিভিং রুম ডিজাইনটা নিজের মতো করে করতে পারবেন।

সেন্টার পয়েন্টঃ ঘর সাজাতে গেলে ঘরের সেন্টার পয়েন্ট ঠিক করাটা খুবই জরুরী। আপনি যদি আপনার ঘরের সেন্টার পয়েন্ট ঠিক না করতে পারেন, একেবারেই দুশ্চিন্তা করবেন না। ঘরে প্রবেশ করুন। একেবারে প্রথমেই ঘরের যে দিকটাতে চোখ যাবে, সেটিই আপনার ঘরের সেন্টার পয়েন্ট। এখানে রাখতে পারেন আপনার প্রিয় কোন ছবি, কোন রুচিশীল চিত্রকর্ম অথবা আপনার কালেকশনের গর্জিয়াস কোন আসবাবপত্র। এসব না করতে চাইলে আপনার দেয়ালটিকে রাঙিয়ে দিতে পারেন বিভিন্ন রঙে। ঘরে ঢুকতেই দেয়ালজুড়ে রঙের খেলা আপনার সুন্দর রুচিরই পরিচায়ক।

ঘরের মাপঃ ঘর সাজানোর পূর্বেই ঘরের মাপ সম্পর্কে আপনার একটি ভালো ধারণা থাকতে হবে৷ তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন কোন আসবাবপত্রটি আপনার ঘরে ভালো ফিট করবে৷ এবং অবশ্যই ঘরে পর্যাপ্ত স্পেস রাখুন৷ স্পেস বের করার জন্যে যে আপনাকে আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলতে হবে, এমনও নয়৷ ঘরের জিনিসপত্রগুলো এলেমেলো না রেখে সুশৃঙ্খলভাবে সাজান, দেখবেন ঘরে অনেকটা ফাঁকা জায়গা বেরিয়ে পড়েছে। অনেকে মিনিমালিস্ট এপ্রোচে ঘর সাজাতে চান। তারা ঘরের পুরো একটা দেয়াল সাদা রং করে ফাঁকা রেখে দিতে পারেন। সাদা ফাঁকা দেয়াল ঘরের পরিবেশকে অনেকটাই ছিমছাম করে তোলে।

লাইটিংঃ লিভিং রুম ডিজাইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো লাইটিং। লাইটিং আপনার ঘরের আবহাওয়াকে মুহুর্তেই পাল্টিয়ে ফেলতে পারে। লাইটিং হতে পারে মূলত ৩ ধরণের।

১. এম্বিয়েন্ট লাইটিংঃ এটি সাধারণ লাইটিং। আপনার বসার ঘরটি আপনি কতটুকু আলোকিত করতে চান, তার উপরে নির্ভর করে লাইটিং করুন। কিছু ডিজাইন জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে ভালো লাগে, আবার কিছু ডিজাইন ভালো লাগে সামান্য আলো আঁধারির খেলাতে। আপনার ডিজাইনের সাথে ম্যাচ করে ঘরের লাইটিং করুন।

২. টাস্ক লাইটিংঃ এসব লাইটিং ব্যবহার করা হয় কোন নির্দিষ্ট কাজের উদ্দ্যেশ্যে। পড়াশোনার জন্যে রিডিং লাইট বা রান্নাঘরে ব্যবহৃত কিচেন লাইট টাস্ক লাইটিং এর মধ্যে পড়ে। আপনার লিভিং রুমে যদি বুক শেলফ থাকে, তবে সেখানে এধরণের লাইটিং ব্যবহার করতে পারেন। অথবা ঘরের কোণে ফুলের টবের পাশে এমন ছোট লাইটিং আপনার ঘরের পরিবেশকে করে তুলতে পারে অনেক বেশি আকর্ষণীয়।

৩. একসেন্ট লাইটিংঃ এ ধরণের লাইটিং ব্যবহার করা হয় ঘরের কোন বিশেষ কিছুকে ফুটিয়ে তুলতে। ওয়াল পেইন্টিং বা ছবির আশেপাশে এরকম লাইটিং এর ব্যবহার রুমে একটা ক্লাসিকাল আবহ তৈরি করে।

এই ৩ টি বেসিক জিনিস খেয়ালে রাখলে আপনার পছন্দের আসবাবপত্র দিয়ে আপনার বসার ঘরটি সাজিয়ে তুলতে পারে৷ সহজেই।

লিভিং রুম ডিজাইন কি অনেক খরচ? – Does Designing a Living Room  Costly?

অনেকেই ভাবেন, লিভিং রুম ডিজাইন অনেক খরচের ব্যাপার। আসলে ব্যাপারটি মোটেও সেরকম নয়৷ টাকা খরচের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ আপনি কতটা যত্ন করে সাজিয়েছেন আপনার লিভিং রুমটি। আপনার সাধ্যের মধ্যেই সবকিছু সম্ভব। নতুন আসবাবপত্র কিনতে হবে না। সোফা কভার, কুশন কভার পাল্টে ফেলুন। ফ্লোরে নতুন কার্পেট পাতুন। সামান্য আঁকিবুঁকির অভ্যাস থাকলে ওয়াল পেইন্টিং করে ফেলতে পারেন নিজেই৷ প্রিয় কিছু বই, কিছু ছবি আর বিভিন্ন শেডের কিছু লাইট দিয়ে সহজেই সাজিয়ে ফেলতে পারেন আপনার বসার ঘরটি।

রুচিশীলতা নাকি জাঁকজমক? – Taste or Splendor?

ছিমছাম কিংবা চাকচিক্যময়, আপনার লিভিং রুমের ডিজাইন যেমনই হোক না কেন, তা যেন হয় আপনার রুচি অনুযায়ী। আপনার বসার ঘরটিকে হয়তো আপনার অনেক লাক্সারিয়াস ভাবে দেখাতে মন চাইতেই পারে৷ এতে দোষের কিছু নাই৷ আবার এমনও হতে পারে, আপনার শান্তিপূর্ণ ছিমছাম পরিবেশ পছন্দ, আপনি সেভাবেই সাজিয়েছেন রুমটি। সেটাও সুন্দর। মোটকথা, আপনার লিভিং রুম ডিজাইন আপনার রুচিকে রিপ্রেজেন্ট করে। যদি কোন স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করতে গিয়ে নিজের বসার ঘরের পরিবেশে নিজেই অস্বস্তিতে পড়ে যান, তাহলে তো অনেক বাজে ব্যাপার হবে। তাই সাধ্যের মধ্যেই সাজিয়ে তোলা সম্ভব আপনার প্রিয় লিভিং রুমটি।

উপসংহার – Conclusion

আপনার ঘরটি কেমন দেখাচ্ছে তার উপর নির্ভর করে আপনার বাসার পরিবেশ। আর আপনার মেজাজ-মর্জি অনেকাংশেই নির্ভর করে আপনার বাসার পরিবেশের উপর। আপনি কেমন রুচির মানুষ, তা অনেকটাই নির্ভর করে আপনি কিভাবে থাকেন, তার উপরে। একটি সুন্দর সাজানো গোছানো বসার ঘর খুব সহজেই আপনার ক্লান্তি দূর করে দিতে পারে, আপনার মনকে করে তুলতে পারে প্রফুল্ল। মনস্তাত্ত্বিকভাবে, আপনি যখন আপনার নিজের বসার জায়গাটিকে নিজের মতো করে সাজিয়ে তুলবেন, তখন ঘরের প্রতি একটা আপন আপন ভাব চলে আসে। ঘর মানেই শান্তি। আর আপনার শান্তির জায়গাটিকে সুন্দর পরিপাটি করে রাখার দায়িত্ব তো আপনারই, নাকি? তাহলে এখনই ঝটপট কাজে লেগে পড়ুন আর ফুটিয়ে তুলুন আপনার মননশীলতা।

1 thought on “লিভিং রুম ডিজাইন কিভাবে করবেন – সঠিক মাপ,লাইটিং এবং খরচ এর বিস্তারিত।”

  1. Pingback: বেডরুমের রং নির্বাচন করুন সহজেই - Easy Way Of Bedroom Color Selection

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top